কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

গাজীপুরে ৯ জেব্রার মৃত্যুর রহস্য কাটছে না

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কে ৯টি জেব্রার মৃত্যুর রহস্য কাটছে না। জেব্রাগুলোর মৃত্যুর পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বোর্ড বলেছে, চারটি জেব্রা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে এবং অপর পাঁচটি বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মারা গেছে।

গত ২৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেলে দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এ কথাগুলো জানান বোর্ড সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

অন্যদিকে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন- জেব্রার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটিয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা একদমই অস্বাভাবিক। কারণ বেষ্টনীতে থাকা জেব্রারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে মৃত্যুর রেকর্ড নেই। যেহেতু জেব্রার শিং নেই তাই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হলেও মৃত্যুর মতো গুরুতর আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা নেই।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পার্কে গত ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩১টি জেব্রা ছিল। জানুয়ারিতে ৯টি মারা যাওয়ার পর এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২। জেব্রার মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে গঠন করা হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অনুসন্ধানী বোর্ড। মৃত প্রাণীর মরদেহের নমুনা বিভিন্ন পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।

মঙ্গলবার সাফারি পার্কের ঐরাবতী রেস্ট হাউসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে বোর্ড বসে। বোর্ডের সভাপতি ছিলেন জাতীয় চিড়িয়াখানার সাবেক কিউরেটর ও চিফ ভেটেরিনারি কর্মকর্তা এ বি এম শহীদ উল্লাহ। বৈঠক শেষে জেব্রাসহ অন্যান্য প্রাণীর নিরাপত্তায় ১০টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাণীর ছাউনি জীবাণুমুক্ত-করণ, সব প্রাণীকে টিকার আওতায় আনা, অধিক পরিমাণে কাঁচা ঘাস না খাওয়ানো, চপার মেশিন দিয়ে ঘাস কেটে প্রাণীকে খাওয়ানো, যে ঘাস দেওয়া হচ্ছিল, সেটি বন্ধ করে অন্য জায়গা থেকে ঘাস এনে বাকি জেব্রাগুলোকে খাওয়ানো, মাংসাশী প্রাণীর খাবারের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়া, দানাদার খাদ্য পরিবেশনের আগে ফাঙ্গাস না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া, দর্শনার্থী বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ প্রাণীকে যেন খাবার দিতে না পারে,  স্পর্শকাতর প্রাণীর ওপর নজর রাখতে নাইট ভিশন ক্যামেরা স্থাপন করা, খালি জায়গায় ঘাস উৎপাদনের ব্যবস্থা করা।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব গণমাধ্যমকে জানান বিশেষজ্ঞ দলের সভাপতি এ বি এম শহীদ উল্লাহ। তিনি বলেন, এই প্রস্তাবগুলো অনুসরণ করলে শুধু জেব্রা নয়, পার্কের সব প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা হবে।

জেব্রার মৃত্যুর কারণ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মোস্তাফা ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, সাফারি পার্কে জেব্রাগুলো একটা নির্দিষ্ট বেষ্টনীর ভেতর থাকে। বেষ্টনীতে থাকা জেব্রারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ায় না। জেব্রার শিং নেই তাই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হলেও গুরুতর আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা নেই।

ব্যাকটেরিয়ায় মৃত্যু সম্পর্কে মোস্তাফা ফিরোজ বলেন, ব্যাকটেরিয়ার কারণে প্রাণীর মৃত্যু ঘটতে পারে। এ জন্য প্রাণীর খাদ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেওয়া জরুরি।

পাঠকের মতামত: